সাকিবই বলেছিলেন, আইপিএলের চেয়ে দেশ বড়

২০১৪ সালে শেন জার্গেনসনের বিদায়ের পর বাংলাদেশের দলের কোচ হিসেবে আসেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু দেশে এসেই চান্দিকার সাথে ঝামেলায় বাঁধে দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ছাড়পত্র না নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল খেলতে গিয়েই কোচের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এর জের ধরে বিসিবি থেকে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তিনি।





ঝামেলাটা বাঁধে, বিসিবি থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই সিপিএল খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। তখন বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য অনুশীলনে ব্যস্ত। এমন সময়ে সাকিব চলে যাওয়াতে ক্ষুব্ধ হন কোচ চান্দিকা। তাই সাকিবকে দেশের অনুশীলনে যোগ দিতে হুকুম দেন তিনি। কিন্তু সাকিব কোচের চাওয়াকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো কোচের সাথেই বেয়াদবি করে বসলেন। এমনকি বেশি প্রেশার দিলে দেশের হয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেবার হুমকি দেয়।





বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি। অসদাচারণের কারণে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাকিবকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। এমনকি এই সময়ে কোন লিগেও খেলার অনুমতি পাবে না সাকিব।





দেশের খেলা রেখে সিপিএলে রওনা দেয়ায় সাকিবকে নিয়ে তখন তুমুল আলোচনা ছিল। নিষেধাজ্ঞার আগের দিন ফেসবুকের এক পোস্টের মাধ্যমে সাকিব জানিয়েছিলেন, তিনি দেশের হয়ে খেলতেই ভালোবাসেন। যতদিন খেলবেন দেশের হয়েই খেলবেন। লিগ থেকে দেশের হয়ে খেলাটাই সাকিবের জন্য গর্বের।





৬ জুলাই ২০১৪ সালে নিজের পোস্টে সাকিব লিখেছিলেন, ‘আমি সব সময় দেশের হয়ে খেলতে চাই। অন্তত আরো দশ বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই আমি। আইপিএল জিতে বাংলাদেশে এসে আমি বলেছি, বাংলাদেশের হয়ে একটি ম্যাচ জিতে যে আনন্দ, পুরো আইপিএল ট্রফি জিতেও সে আনন্দ নেই। এতেই আমার দেশের হয়ে খেলার ব্যাপারে ধারণা নিতে পারেন। অনেকেই মনে করে আমি ২০১৯ বিশ্বকাপের পর অবসর নিবো। কিন্তু সত্য হলো আমি ২০২৩ সালের বিশ্বকাপও খেলতে চাই।’





সাকিবের কথা ঠিক ধরলে, তার কাছে আইপিএলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু সাকিব কি তার আগের সেই কথা মনে রেখেছে? না হলে ৭ বছর পর সাকিব কেন তার কথার বরখেলাপ করবে? সামনেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিউজিল্যান্ড সফর। তৃতীয় বাচ্চা আগমণ উপলক্ষে ছুটিতে সাকিব। কথা ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলবেন। কিন্তু আইপিএলের নিলামে কলকাতা সাকিব আল হাসানকে ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কিনে নেওয়ার পরেই বিসিবির কাছে ফের ছুটি চাইলেন সাকিব। এবার সাকিবের আবেদন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি টেস্ট খেলবেন না।





এদিকে জোর করে কাউকে দলে খেলাতে চায় না বোর্ড। তাই আলোচনা করে সাকিবের ছুটি মঞ্জুরও করেছে বিসিবি। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেন, সাকিব আমাদের চিঠি দিয়েছে, সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে চায় না। আমরা মিটিং করেছি, অনেক আলোচনা হয়েছে এটা নিয়ে। বোর্ড আগেও নানা সময়ে নানাজনকে ছুটি দিয়েছে। তবে জাতীয় দলের খেলার সময় সাধারণত আমরা দিতে চাই না ছুটি। কিন্তু আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জোর করে কাউকে বাংলাদেশ দলে খেলা হবে না।





তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের টেস্ট সিরিজ ও আইপিএল একই সময়ে হবে। সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না এই সিরিজে। আমরা তাকে ছুটি দিয়েছি।
হঠাৎ করে দেশের খেলা বাদ দিয়ে আইপিএল খেলতে চাওয়ায় সাকিবকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে সাকিব। কেউ কেউ সাকিবকে টেস্ট দল থেকেই বাদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এমনকি সাকিবের এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সাকিবকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না রাখার কথা বলেছেন ক্রিকেট সমর্থকেরা।
সামনেই ভারতে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অনেকের ধারণা, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতেই টেস্ট বাদ দিয়ে আইপিএলে পুরো মৌসুম খেলতে চান সাকিব আল হাসান।